ঢাকা মহানগর এলাকায় বাড়ির মালিকদের মাধ্যমে ভাড়াটিয়াদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কাজ থেকে পুলিশকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
তথ্য সংগ্রহের এই কার্যক্রমের আইনগত কী ভিত্তি আছে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে নোটিসে।
মঙ্গলবার রেজিস্ট্রার ডাকে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর কমিশনারকে পাঠানো ওই নোটিসে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে তিনি যথাযথ আদালতে সুরক্ষা চাইবেন।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন মেনে চলা একজন নাগরিক হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনগত সহায়তা করতে আমি ইচ্ছুক। তবে যে সহায়তা তারা চাইছেন তা তাদের আইনগত এখতিয়ারে পড়ে না। এভাবে ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়ার মতো কোনো আইনি সুযোগ পুলিশের নেই।”
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন বাড়িতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা ও বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর গতবছর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের এই কাজ শুরু করে মহানগর পুলিশ।
এক পৃষ্ঠার যে ফরম ভাড়াটিয়াদের পূরণ করতে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ভাড়াটিয়ার ছবির পাশাপাশি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখসহ বাসার বাসিন্দা এবং গৃহকর্মী ও ড্রাইভারের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
উপরে ঢাকা মহানগর পুলিশের লোগো সম্বলিত ওই ফরমের ফটোকপি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আবার তা সংগ্রহ করছেন পুলিশ সদস্যরা।
কিন্তু পুলিশের এ উদ্যোগ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও সংশয় তৈরি হওয়ায় সোমবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি নিজেও স্বীকার করেন, মানুষ মনে করছে, এসব তথ্য দিয়ে ভবিষ্যতে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে পারেন তারা।
“এই তথ্য আমরা নিচ্ছি নগরবাসীর নিরাপত্তা বিধানের জন্য। এই তথ্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে, সংরক্ষিত থাকবে। অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে একটি মহল্লাতে কারা বসবাস করে, কারা বাড়ির মালিক, কারা দোকানের মালিক, কারা প্রতিষ্ঠানের মালিক আর কারা ভাড়াটিয়া- তাদের তথ্য আমাদের কাছে সংগৃহীত থাকবে।”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বর্তমানে অপরাধে মাত্রা ও প্রক্রিয়া এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মহানগরীতে বসবাসরত মালিক-ভাড়াটিয়া সবার নাম-পরিচয়সহ একটি তথ্যভাণ্ডারের প্রয়োজনীয়তা পুলিশ অনুভব করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মিরপুরের শাহআলী থানা এলাকা এবং উত্তর বাড্ডা, মোহাম্মাদপুর ও দক্ষিণখানের কয়েকটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক ও জঙ্গি গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “প্রতিটি ঘটনায় দেখেছি, ওই সব বাসা এক/দুই মাস আগে ভাড়া নেওয়া হয় মিথ্যা নাম দিয়ে, মিথ্যা পেশা দিয়ে এবং নিজেদের পরিচয় গোপন করে। পরে অপরাধ করার চেষ্টা হয়। অপরাধ প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর তারা দূরে কোথাও চলে যায়- সেটাও ভাড়া বাসা।”
সব বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য ১৫ মার্চের মধ্যে সংগ্রহ করে তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ শুরু হবে বলে পুলিশ কমিশনার জানান।
তবে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন, নাগরিকদের যেসব ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য পুলিশ যেভাবে সংগ্রহ করছে, তা করার মতো প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পুলিশের নেই।
“এসব তথ্যের অপব্যবহার হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া এসব তথ্য যদি কোনো ভুল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে পড়ে, তাহলে ব্যক্তির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।”
সংবিধানে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, পুলিশের এ উদ্যোগে তাও ভঙ্গ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
No comments:
Post a Comment